মঞ্চনাটক দেখতে গিয়ে একবার এক কিশোরের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হলেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েল। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, ‘চালিয়ে যাও। তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে। অনেক নাম হবে তোমার।’ শুনে ছেলেটি প্রস্তাব করলো, ‘আপনি আর আমি কি একসঙ্গে কাজ করতে পারি? দু’জনের আয় না হয় সমান ভাগে ভাগ করে নেবো।’ এমন ধৃষ্টতা দেখে কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলেন ডয়েল তবে বাচ্চা ছেলের আবদার ভেবে খুউব একটা পাত্তা দেননি। ছেলেটির নাম চার্লি চ্যাপলিন; পরবর্তীতে যার উত্থান দেখে যেতে পারেননি শার্লকের জনক স্যার আর্থার।
এখনকার দর্শকেরা অনেক স্মার্ট। তারা শার্লক এবং শার্লকের স্রষ্টার চাইতেও বেশি জানে। তাই তাদেরকে আউটস্মার্ট করতে হলে তাদের জানার পরিধির বাইরে কিছু দেখাতে হবে। ঠিক এ ভাবনা থেকেই যেনো— বিবিসি শার্লককে নতুন করে গর্ভধারণ করেছে। শুরুটা করেছিলো ডিটেক্টিভ থ্রিলার হিসেবে, পরিণত করেছে সাইকোলজিকাল থ্রিলারে এবং শেষ করেছে ফ্যামিলি ড্রামা দিয়ে। তবে ইহা যে সহীহ শার্লক নহে, তাহা বলবার জন্য সার্কাজমের প্রয়োজন হয়না; প্রতি এপিসোডের শুরুতে বিবিসি নিজেই সেটা স্বীকার করে নেয়।
ভালোবাসা আর যুদ্ধেই সব জায়েজ? ভুল। শুধু একটা ব্যাপারেই সব জায়েজ, তা হচ্ছে ফিকশন। আর সেটা যদি হয় উপভোগ্য তবে ফিকশন রুপান্তিরত হয় অ্যাডিকশনে। শার্লক টিভি সিরিজটি তেমনই এক পিনিক পরিবহন। যে পরিবহনের ড্রাইভার শার্লক, হেল্পার ওয়াটসন। যাত্রাপথে ড্রাইভারের বিরুদ্ধে চিল্লাফাল্লা করে পিনিক বাড়িয়ে দেয়া চরিত্র মরিয়ার্টি। কিন্তু আমরা যদি জানতে পারি সে চরিত্রটি ড্রাইভারের আত্মীয় হয় তবে তার চিল্লাফাল্লা আর মজা লাগবেনা; ঠিক যেমনটা হয়েছে ইওরসের ক্ষেত্রে। সে পাক্কা কোরিওগ্রাফারের মতো নাচিয়েছে ড্রাইভার সাহেবকে। তবুও পাবলিক মজা পায়নি, কারণ আত্মীয়স্বজনের ট্যালেন্টকে ছোট করে দেখতেই মজা বেশি। চার মৌসুম ধরে ড্রাইভারটি চালাচ্ছে, দ্বিতীয় মৌসুমের শেষে সে যখন গাড়ি থেকে লাফ দিলো; তখন সাথে যাত্রীদেরও লাফ দেয়া উচিত ছিলো। কিন্তু যাত্রীরা পিনিকের টানে পরিবহণেই রয়ে গেলো। এরপর ড্রাইভার সাহেবের প্রত্যাবর্তনে পিনিক পরিবহণেও পরিবর্তন ঘটতে থাকলো; ড্রাইভারের কাছে গন্তব্যের চেয়ে হেলপারের ব্যক্তিগত জীবন বেশি প্রাধান্য পেতে লাগলো। যেটা টের পেতে পিনিক্রান্তদের সময় লেগেছে পরবর্তী দুই মৌসুম। ততোদিনে পরিবহণ পথের পাশে থামিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে জার্নি শেষ। খোদা হাফেজ।
আমরা লজিক দিয়ে হার-জিত নির্ধারণ করি। কিন্তু আমাদের অনুভূতি কখনো লজিক মেনে চলেনা। বলা হয়ে থাকে— ইফ ইউ ক্যান ড্রিম ইট, ইউ ক্যান ডু ইট। আমি বলি কী— ইফ ইউ ক্যান ফিল ইট, ইউ শুড এক্সপ্রেস ইট। আদারওয়াইজ ইওর ফিলিংস আর ইনভ্যালিড। সেন্টিমেন্ট ইজ আ কেমিকেল ডিফেক্ট ফাউন্ড অন দ্যা লুজিং সাইড। কথাটা যে বলেছিলো, শেষে এসে নিজেই সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেলো।