Thursday, December 8, 2016

আর্ট ফিল্মজনিত অ্যালার্জি বা FAQ


মোশন পিকচার বা চলচ্চিত্র, আমরা যারা দেখতে আগ্রহী। তাদের কাছে সিনেমা মানেই হচ্ছে ইয়া বিসমাইক টাইপ মারামারি, বাজেট বেশি থাকলে মাইর খেয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে আর বাজেটের স্বল্পতায় বের হবে পানি। আপনার মনে প্রেম লাগছে, কিন্তু আপনার সাথে রাস্তাঘাটের অপরিচিত লোকজনও নাচবে। নাচতেই হবে। এজন্যেই তো তাদের ভাড়া করা হইছে। আমরা জানি নায়কের গুলি খাইলেও কিছু হবেনা, কারণ পিস্তলে গুলি না ভিটামিন ক্যাপসুল ছিলো। আমরা যারা সিনেমা মানেই লারেলাপ্পা মনে করি তাদের কাছে এর বাইরে সবকিছুই বোরিং। আমাদের কাছে আর্ট হচ্ছে বোরিং ব্যাপার। তথাকথিত সামাজিক ভাবনায়, বুদ্ধিমানেরা সায়েন্স নিয়ে পড়ে। একটু কম বুদ্ধিমানেরা কমার্স নিয়ে, আর যাদের বুদ্ধি নাই তাদের আর্টসে পাঠায় দেয়া হয়। লজিকাল হইলেও মজা পাইনা তাই আর্ট ইলজিকাল লাগে আরকি। এই হচ্ছে সিচুয়েশন। সাবজেক্ট হোক বা ফিল্ম, আর্ট হচ্ছে প্যাচাইল্লা জিনিস। এই অ্যালার্জির জন্যে মূলত আমরা নিজেই দায়ী। প্রশ্ন করতে আসতে পারে, কেন? উত্তর সহজ, আর্ট নিয়ে আমরা বেশ ভয়াবহভাবে কনফিউজড্ এবং সেটার সংক্রমন দিনে দিনে বাড়তেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত না আমাদের ধারণা স্পষ্ট হবে। কিছু Frequently Asked Questions এর জবাব দিয়ে আর্ট ফিল্মজনিত অ্যালার্জির প্রতিশেধক দেবার চেষ্টা করছি স্টেপ বাই স্টেপ—
  • "আর্ট ফিল্ম" জিনিসটা আসলে কি? কপিবুক ষ্টাইলে বলতে গেলে, An art film is "intended to be a serious artistic work, often experimental and not designed for mass appeal"; they are "made primarily for aesthetic reasons rather than commercial profit" and they contain "unconventional or highly symbolic content."
নিজ ভাষায় বলতে গেলে— মূলধারার এবং বানিজ্যিক প্রবাহের বাইরে গিয়ে শিল্পচাতুর্যপূর্ণ, পরীক্ষামূলক এবং সনাতন নিয়মবিরুদ্ধভাবে যে চলচ্চিত্র নির্মান করা হয় তাকেই "আর্ট ফিল্ম" বলে।
  • এটাকে আর্ট ফিল্ম বলার যৌক্তিকতা কি? আর্ট ফিল্ম এর সংজ্ঞা থেকেই কিন্তু নামকরনের যৌক্তিকতা প্রমানিত হয়। শিল্প যেখানে মুখ্য, ব্যবসা যেখানে গৌণ; লৌকিকতাবর্জন এবং মুক্তাচরণ এর কারনেই কিন্তু ইহা "আর্ট ফিল্ম" নয়তো কমার্শিয়াল ফিল্ম হয়ে যেতো।
  • সিনেমা আর আর্ট ফিল্মের মধ্যে পার্থক্যটা কিসের? পার্থক্যটা মূলত শৈল্পিক! নির্মাতার সম্পূর্ন শৈল্পিক স্বাধীনতা থাকে আর্ট ফিল্মে। মেইনষ্ট্রিম মুভিতে কিন্তু নির্মাতা কিছু তথাকথিত ব্যাকরণ এবং ব্যবসাসফলতার একটি নির্দিষ্ট ছকে বন্দী। পার্থক্য এখানেই।
কলকাতার মুভি দেখা শুরু করলেই এক একজন লাফ দিয়ে বলে ওঠে আর্টফিল্ম! কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাঁরা আসলে সব মুভিতে একই জিনিস দেখিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। এইগুলোই কি আর্ট?
চমৎকার টেমপ্লেট! আসলেই এগুলোই কি আর্ট? আচ্ছা, তার আগে জানতে হবে আর্ট বলতে আমরা কি বুঝি? আর্ট মানে শিল্প, এইটুক তো সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু এই শিল্প জিনিসটাই বা কী? একদম সহজভাবে বলতে গেলে শিল্প হচ্ছে ইন্দ্রিয় আধৃত অভিব্যক্তি। অর্থাৎ, ধারণ করা অনুভূতি। হতে পারে যেকোনো কিছুর। লেখা, আঁকা, বলা, দেখা, পড়া। তবে থাকতে হবে অনুভূতির মিশ্রণ এবং সে মিশ্রণে নিজেকে বা নতুন কিছু খুঁজে পাবার তাগিদ। হতে পারে গভীর তবে মনোযোগ দিলে হয়ে যাবে সহজ এবং সুন্দর। আমরা যা ই বুঝি না কেন, আর্ট কিন্তু কোনো জেলখানায় বন্দী নেই। স্থান, কাল, পাত্রভেদে আর্টে ব্যাপকভাবে বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়। এখানে উল্লেখ্য, ফ্যাশন এবং আর্ট কিন্তু একই ব্যাপার নয়। জোক্স আপার্ট, একই জিনিস কোনো এক জায়গায় আর্ট; আবার অন্য কোনো জায়গায় ফার্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। সিরিয়াসলি। পৃথিবীর কোনো অঞ্চলে (নাম মনে পড়ছে না, প্লিজ গুগল ইট) প্রকাশ্যে ফার্ট মানে পাঁদ দেয়াকে ভদ্রতার অংশবিশেষ হিসেবে ধরা হয় আর হাঁচি দেয়াকে চরম অভদ্রতা হিসেবে ধরা হয়। আমাদের অঞ্চলে কিন্তু এর উল্টোটা ধরা হয়। যদিও ব্যাপারটা আর্টের পাল্লায় পড়ে না, কিছু নিছক রীতিনীতি মাত্র। ভৌগলিক অবস্থান এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্য/প্রথা আর্ট এর উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যেহেতু প্রশ্নটা কলকাতাভিত্তিক সেহেতু বুঝতে হবে কলকাতা আর বাকী দুনিয়ার মধ্যে অবশ্যই কিছু শৈল্পিক পার্থক্য বিদ্যমান। কলকাতা যেহেতু ভারতের অন্তর্গত সেহেতু ভারতের প্রাগঐতিহাসিক আর্ট সম্পর্কে জানতে হবে। কামসূত্রের নাম শুনেছি নিশ্চয়ই? আমাদের কাছে পর্নোগ্রাফিক কন্টেন্ট হলেও, এটা কিন্তু ভারতের ঐতিহ্য। কালচারাল এবং আর্টিষ্টিক অ্যাসেট। পতিতালয় সম্পর্কে আইডিয়া আছে নিশ্চয়ই? পতিতাবৃত্তি কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পেশা। পৃথিবীর সর্বাধিক পতিতালয় কিন্তু ঐ ভারতেই অবস্থিত। আবার গুগলের জরিপ অনুযায়ী, গুগলের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট সার্চের দিক দিয়ে ঐ ভারতের অবস্থান কিন্তু দ্বিতীয়। ভারতীয় প্রাচীন মূর্তিগুলো খেয়াল করেছি কখনো? শৈল্পিকভাবে মূর্তিগুলোতে ন্যুডিটির প্রভাব প্রকট, যেটা গ্রীক বা ইউরোপিয়ানদের ক্ষেত্রেও খাটে। এখন কালচারটা যেমন আর্ট ফিল্মও তেমন হবে। আর্ট ফিল্মে দেখানো ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা তো এখন বিশ্বজনীন নৈমেত্তিক ব্যাপার। আমি কিন্তু কোনো দেশ বা অঞ্চলের নিন্দা করছি না বরং বিবরণ দিচ্ছি। এমন বৈচিত্রময় পৃথিবীতে, সব আর্টই কি সরলীকরণ করা যায়? তাহলে আমরা তালগাছের নিচে বসে আম খাওয়ার আশা করছি কোন যুক্তিতে?
প্রাসঙ্গিকভাবেই, বলতে হয় অনেককেই দেখি কলকাতার আর্টফিল্ম দেখে নাক সিটকান। কলকাতার উদারপন্থি আর্ট ফিল্ম দেখতে বসে যদি ইরানী রক্ষনশীল কন্টেন্ট এক্সপেক্ট করেন তবে ওদের দোষ দিয়ে কি লাভ? আসল ভন্ড তো আমরা! ঘরে-বাইরে যা হচ্ছে সেটাই তারা আর্ট ফিল্মে দেখাচ্ছে। অন্তত ওরা ওদের বাস্তবতা/কালচার আর্ট ফিল্মের মাধ্যমে সেল্যুলয়েডে তুলে ধরছে। আমি বরং ওদের সৎসাহসের প্রশংসাই করবো। আর আমরা কি করছি? সারা দেশ যেখানে মৌলবাদে ছেয়ে গেছে সেখানে তারেক মাসুদের মত জিনিয়াস নির্মাতার মাটির ময়না নিষিদ্ধ হয়! কেন? কারণ মৌলবাদের ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখানো হয়েছে তাই। ওদের তো সৎসাহস আছে, আমরাই তো কাপুরুষ! এখন উত্তর চাই, কাপুরুষতাই কি আমাদের আর্ট?
কপি করেও আর্ট ফিল্মের নামে চালিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আর মেইনস্ট্রিমের সাথে পার্থক্য রইলো কই?
এটা কপিবাজদের গুরুচন্ডালী দোষ। এদের নির্দিষ্ট কোনো গোত্র নাই। এখন যদি বলি রবীন্দ্রনাথ তার বেশ কয়েকটা সঙ্গীতের সুর বিভিন্ন আইরিশ/স্কটিশ ফোক সং থেকে হুবুহু লাইন টু লাইন কপি করেছে, তাহলে হয়তো গাঁজার দাম কতো প্রশ্ন আসতে পারে। অনেকে কপিকে বৈধ করতে 'Inspiration' শব্দটা ব্যবহার করে থাকেন। এই অবাধ ইন্টারনেটের যুগে, তথ্য কি আর আটকে রাখা যায়? হালের 'Sherlock' টিভি সিরিজটা মনোযোগ দিয়ে দেখলেও তো প্রমান পেয়ে যাবার কথা। আরেকটা কথা, আর্ট ফিল্মে যতনা কপি হচ্ছে তার চেয়ে কয়েক হাজার কোটি গুনে কপি হয় মেইনষ্ট্রিম ফিল্মে। তা মেইনষ্ট্রিমের গুরুচন্ডালী দোষ আর্ট ফিল্মের উপর চাপাচ্ছি কেন?
এই আর্ট ফিল্মজনিত অ্যালার্জি নিয়ে নিজস্ব মূল্যায়ন

বছর খানেক আগের কথা যখন IELTS এর কোচিং করি। একদিন কোর্স টিচার জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা বলো তো ইংরেজী শেখার সহজ উপায় কি? বললাম, মুভি দেখা। স্যার হেসে বললো, তোমার ধারণা ভুল। কেউ যদি বাংলা শিখতে চায় তারে কি বলবা বাংলা মুভি দেখতে? এরপরে ডিপজল বলবে খাইসি তোরে! সান্ডে মান্ডে ক্লোজ! পুত কইরা দিমু! ঠিক একইভাবে কেই যদি মুভি দেখে ইংরেজী শিখতে চায় তবে বিভিন্ন উদ্ভট ডায়লগ আর ভিন্ন অ্যাকসেন্টের প্রোনান্সিয়েশনে ভুলভাল ইংরেজীই শেখা লাগবে। গ্রামারের গ্রামে আগুন! পয়েন্ট টুবি নোটেড হেয়ার মাই ডিয়ার, আমরা আর্ট ফিল্ম এর কনসেপ্ট সম্পর্কে জেনেছি কোলকাতা থেকে। পাশাপাশি ইরানী/বিভিন্ন ফরেন আর্ট ফিল্ম দেখে টেষ্ট ফ্ল্যাকচুয়েশনে/অ্যালার্জিতে ভুগেছি। অথচ যদি জাপানী চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া এর আর্ট ফিল্মগুলা দেখে আর্টফিল্ম এর কনসেপ্টে সম্পর্কে জানতাম তবে এতো অ্যালার্জিতে ভুগতে হতো না। আমরা বড় হয়েছি নায়িকার বক্ষ ঝুলানো দেখে। যদি ইয়োজিম্বো, সেভেন সামুরাই, রাশোম্যন, ড্রাঙ্কেন অ্যাঞ্জেল, কাজুমাসা দেখতাম তাহলেই বুঝতাম আর্ট ফিল্ম কি জিনিস! আকিরা কুরোসাওয়া নামক সাইক্লোনে- আর্ট ফিল্ম কিভাবে মেইনষ্ট্রিম মুভিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো শিখেছে সেটাও এক্সপেরিয়েন্স করতে পারতাম। পরবর্তীতে আরেজনের কথা না বললেই নয়, গুরু ষ্ট্যানলি ক্যুবরিক- উনার সম্পর্কে কিছু না বলে উনার যেকোনো একটা মুভি দেখলেই হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় আর্ট ফিল্ম দেখার জন্য যে হিউমার, নলেজ, ইমাজিনেশন এবং ধৈর্য দরকার। আরেক গুরু ঋত্বিক ঘটকের মতো ভাবনা প্র্যাক্টিস করবার তাগিদ আসে। রটেনে ক্যুবরিক এর তুলনামূলক কম ফ্রেশনেস পাওয়া সিনেমা হলো 'Eyes Wide Shut'। এই মুভিটাতে একটা বেডরুমের গল্পকে এমন সাহসিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে দেখেই অনেকে বলে বসতে পারে, ধুর বাল এডি কী!
যদিও এখন নিজেকে বাঁচাল/জ্ঞানপাপী টাইপ কিছু মনে হচ্ছে এবং প্রচন্ড বিব্রতবোধ করছি তবুও যেহেতু ডিসকাশন শুরু করেছি তাই যাষ্ট আরও কিছু পয়েন্ট অ্যাড করতে চাই। তার আগে বলে নিই যে, আমি ঢালাওভাবে বলছি না যে আর্ট মানেই ন্যুডিটি; তবে যেকোনো অঞ্চলের শিল্পেই যৌনতার প্রভাব বিদ্যমান। আর্ট ফিল্ম দেখতে হলে এই ফ্যাক্টটা মেনে নিতেই হবে। এখন যা বলবো এগুলো আর্ট ফিল্মের একদম বেসিক ইনফো, আমার শুরুতেই বলা উচিত ছিলো। তাহলে নোটের প্রথম দিককার ভাবনাগুলো আরও সহজবোধ্য হতো-
উনিশ শতকের শুরুর দিকে আর্ট ফিল্ম মেকিং শুরু হলেও মূলত ফর্টিজ এর দিকে এসে আর্ট ফিল্ম বেশ পোক্তভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একে একে মুক্তি পায় সিটিজেন কেইন, বাইসাইকেল থিফ, লা ষ্ট্রার্ডা এর টাইমলেস ক্ল্যাসিক কিছু মুভি। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় অধিকাংশ ক্ল্যাসিক সিনেমাই কিন্তু আর্ট ফিল্ম। ততদিনে কিন্তু চার্লস চ্যাপলিনও আর্ট ফিল্মের জন্য একটি দুর্দান্ত বেইজ তৈরী করে দিয়েছেন। আজকের সিনেমা জগত যদি এতো দূর পর্যন্ত এসে পৌছায় তবে তার জন্য চ্যাপলিন সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবেই! এদিকে সে সময় ইতালিয়ান এবং ফ্রেঞ্চ আর্ট ফিল্মমেকাররা ইউরোপিয়ান সিনেমায় আর্ট ফিল্ম নামক একটি নিউ ওয়েভ চালু করেন। যার সর্বাধিক সুফল লাভ করে ফ্রেঞ্চ আর্ট ফিল্মগুলো। সেই আর্ট ফিল্মের ওয়েভ শুধুমাত্র ইউরোপেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়েছে এশিয়াতেও। জাপানের আকিরা কুরোসাওয়া আর এ উপমহাদেশের সত্যজিৎ রায় এশিয়ার সিনেমায় এনেছেন আর্ট ফিল্মের নিউ ওয়েভ!
এখন খুউব লজিকাল একটা প্রশ্ন করে আমাকে আটকে দেয়া যায় সহজেই- আচ্ছা, তাদের কালচারে যদি ন্যুডিটির/যৌনতার প্রভাব এতটাই প্রকট হয় তবে সত্যজিৎ রায় কিভাবে এত সুশীলভাবে অপু ট্রিলোজি নিমার্ন করলেন? অপু ট্রিলোজিও আর্ট ফিল্ম আবার গান্ডুর মত মুভিকেও আর্ট ফিল্ম বলা হয়! কেন? এই কেন এর উত্তর, আমেরিকানরাই দিয়ে দিয়েছে সেই ৬০/৭০ দশকে! সে সময় হলিউডের দেশ আমেরিকায় আর্ট ফিল্ম নিবাস গড়ে। তার আগ পর্যন্ত আর্ট ফিল্মগুলোর উপজিব্য ছিলো জীবনমুখী সুশীল প্লট। এরপর থেকেই মূলত আর্ট ফিল্ম মেকিংয়ে যৌনতাপূর্ণ কন্টেন্ট প্রবেশ করে। প্রথমদিকে এ ধরনের আর্ট ফিল্মগুলোকে বি গ্রেডেড মুভি বলা হলেও পরের দিকে ক্ল্যাসিক মুভি হিসেবে গন্য করা হয়। আর তখন থেকেই যৌনতাপূর্ণ কনটেন্ট দিয়ে আর্ট ফিল্ম মেকিং একটা ট্রেন্ডে রূপান্তরিত হয়। এর অবশ্যই একটা ব্যাখ্যা আছে। ধরি, ১৯৪০ সালে কোনো মুভির গল্পের প্রয়োজনে যৌনতাপূর্ণ দৃশ্য দেখাতে হতো তবে সেক্ষেত্রে নির্মাতারা কৌশলে এড়িয়ে যেতেন। কিন্তু ঐ একই প্রয়োজনে ১৯৭০ সালের নির্মাতারা একদম বোল্ড সিক্যুয়েন্স শ্যুট করতে পিছপা হননি। আর এখন তো ২০১৬ চলছে!
আরেকটা উদাহরন দেই, ধরি 'পম্পেই' নগরীর জীবনযাত্রা নিয়ে আমি একটা আর্ট ফিল্ম বানাবো। তো আর্ট ফিল্ম যদি আমি ১৯৪০ সালে বানাতাম তবে অনেক সেন্সর করে বানানো লাগতো। যেহেতু ২০১৬ তে বানাচ্ছি সেহেতু ট্রেন্ড এবং ফ্রিডম দুইটাই আমার অনুকূলে। স্বাভাবিকভাবেই আমার আর্ট ফিল্মে ন্যুডিটি, সেক্স, ভায়োলেন্স, ইনসেষ্ট, সমকামীতার মত ব্যাপারগুলো খুউব স্পষ্টভাবে উঠে আসবে। কারন যদি রোমের ইতিহাস জেনে থাকি তবে এটাও জানার কথা যে ঐসব ব্যাপারগুলোর কারনেই মূলত 'পম্পেই' নগরী বিলুপ্ত হয়েছিলো। এবার ফিরছি 'গান্ডু' প্রসঙ্গে, এই ফিল্মটাকে অনেকেই পর্নমুভি বলে গালি দেয়। আমি বরং মুভিটার প্রশংসা করি! কেন? বয়সন্ধিকালের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দে উন্মত্ত এক কিশোরের গল্প গান্ডু। বয়সন্ধিকালে একটা কিশোর যেসব 'আকাম-কুকাম' করে বেড়ায় এবং তার পারিপারর্শ্বিক জগতের একটি বোল্ড প্রতিকৃতি হলো গান্ডু। এইরকম সেনসিটিভ ব্যাপারগুলোকে সেল্যুলয়েডের ফিতায় বাঁধতে পারা আসলেই সাহসিকতা এবং প্রশংসার দাবীদার! গান্ডু যদি পর্নমুভি হয়, তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে বয়সন্ধিকালের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দে উন্মত্ত প্রত্যেকটি কিশোরের জীবনই একেকটা চটিগপ্প! গেইম অফ থ্রোন্সে ইনসেষ্ট/ন্যুডিটি/সমকামীতা/সেক্সুয়াল ভায়োলেন্সে পলিটিকস দেখাইলেই এপিক আর একই জিনিস কোনো আর্ট ফিল্মে দেখাইলেই পর্নমুভি? ব্যাপারটা ডাবল ষ্ট্যান্ডার্ডের হয়ে গেলো না? যে ব্যাপারগুলো এখনো সমাজে রয়ে গেছে সেগুলোই আর্ট ফিল্মের জ্বালানী। এগুলো যতদিন থাকবে ততদিন এই ধরনের আর্ট ফিল্ম নির্মিত হবেই! ইউ একসেপ্ট ইট অর নট, বাট ইটস আ ফ্যাক্ট। ফ্যাক্টস আর মেইড অফ ট্রুথ। সুশীলতা দিয়ে ফ্যাক্টস ডিজ্যাবল করা যায়না।
ব্যক্তিগত উপলব্ধি দিয়ে আমার মতামতের ইতি টানতে চাই আপাতত। আসলে আর্ট জিনিসটাই অনুভূতির পাল্লায় মাপতে হয়, কেউ কাউকে ফিলিংসটা বুঝিয়ে দিতে পারেনা। আই ক্যান শো ইউ দ্যা ডোর, বাট ইউ হ্যাভ টু ওয়ার্ক থ্রু ইট। থাই ফুডের নাম শুনেছি/খেয়ছি নিশ্চয়ই? থাই ফুডের বেসিক ইনগ্রিডিয়েন্ট হলো চারটা। সল্ট, পিপার, সয়া স্যস আর সুগার। যতই ইম্প্রোভাইজ করা হউক না কেন ঐ চারটা ইনগ্রিডিয়েন্টের যেকোনো একটা বাদ গেলে ঐটা জীবনেও থাই ফুড হবে না। আর্ট ফিল্মটাও অনেকটা থাই ফুডের মত হয়ে গেছে আর 'Sexually Explicit Content' হয়ে গেছে সয়া স্যসের মতন। সয়া স্যসে যদি অ্যালার্জি থাকে তবে থাই ফুড না খাওয়াটাই শ্রেয়!
তো এই আজাইরা ব্যাপারটা নিয়ে এতো বকবক করলাম কেন? আমার কাছে চলচ্চিত্রকে একটা কম্বো আর্ট মনে হয়, যেখানে আর্টের গুরুত্বপূর্ণ শাখাগুলো একত্রিত হয়। কম্বো প্যাকেজে যেমন ফ্রাইজ থাকে, কোক থাকে ঠিক তেমন। একটা চমৎকার চলচ্চিত্রে দারুণ লেখনী থাকে, চিত্র থাকে, সঙ্গীত থাকে, থাকে ভাবনার খোরাক। আরাম করে বসে বসে দেখবার আর লেখবার লোভ সামলেই কী করে বলুন?

No comments:

Post a Comment